Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিকাজে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি

কৃষিকাজে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি
কৃষিবিদ খোন্দকার মোঃ মেসবাহুল ইসলাম
কৃষি উৎপাদনে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হলো সেচের পানির প্রাপ্যতা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ফসল উৎপাদন এলাকায় অনিয়তিভাবে খরা ও বন্যা দেখা দিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে   কৃষিকাজে পানির ব্যবহারেও দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। বর্তমানে ২.৮ বিলিয়ন মানুষ পানি স্বল্পতায় ভুগছে, কিন্তু ২০৩০ সালে এই সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকে উন্নীত হওয়ার আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা। অতীতের জীবাশ্ম-পানির ব্যবহার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, আগামীতে কৃষিতে সেচের পানি ব্যবহারে ও বৃষ্টিনির্ভর সেচ পদ্ধতিতে দক্ষতা আনতে না পারলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাতে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে না।
অসেচকৃত জমির চেয়ে সেচকৃত জমি থেকে তিনগুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়। মুদ্রানীতি অনুযায়ী সেচকৃত জমির ফসলের ফলনের মূল্যমান অসেচকৃত জমির ফসলের চেয়ে প্রায় ছয়গুণ বেশি। কৃষিকাজে পানি ব্যবহারের অনেক পদ্ধতি হাজার বছরেরও পুরনো যা অনেক শুষ্ক অঞ্চলে বা কম বৃষ্টিপাত হয় এমন অঞ্চলে এখনো সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফসল আবাদে যে উৎস থেকেই পানি ব্যবহার করা হোক না কেন; যদি সঠিক পরিমাণ পানি ফসলের জন্য সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন পানির সাশ্রয় করা সম্ভব হবে তেমনি অর্থের অপচয়ও কম হবে। ফসলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বা বৃদ্ধির পর্যায়ে পানির সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ফসলের কাক্সিক্ষত ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। তবে ফসলের ক্ষেত্রে পানি সাশ্রয়ের বিভিন্ন পদ্ধতির বা কৌশলের যথাযথ প্রয়োগই অধিক বা কাক্সিক্ষত ফলন প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
সেচ পদ্ধতি  
সেচের পানি সাশ্রয়ে বেশ কিছু সেচ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ড্রিপ পদ্ধতি, ভূনিম্নস্থ সেচনালা পদ্ধতি, ফিতাপাইপ ব্যবহার ও পাকা সেচ নালা ব্যবহার অন্যতম।
ড্রিপ সেচ : ড্রিপ সেচ পদ্ধতিতে গাছের মূলের কাছাকাছি সরাসরি পানি পৌঁছে দেয়া হয়। এতে পানির বাষ্পায়ন কমে পানির অপচয় কম হয়। ড্রিপ পদ্ধতিতে দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে যদি ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরা নির্দিষ্ট সময় পরপর সেট করে দেয় যায়, তাহলে পানির অপচয় কম হয়। যেমন, সকালে যখন ঠা-া পরিবেশ থাকে তখন ফোঁটার সংখ্যা কম এবং দুপুরে রোদ থাকলে ফোঁটার সংখ্যা বাড়ানো অথবা রাতে বন্ধ করে রাখা। যদি সঠিকভাবে ড্রিপ সেচ পদ্ধতিটি স্থাপন ও পানি সেচ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে প্রথাগত সেচ পদ্ধতির চেয়ে ৫০-৭০% পর্যন্ত পানির সাশ্রয় করা সম্ভব হতে পারে এবং            ২০-৯০% পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে।  এতে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে পানি পাওয়ায় মাটিতে প্রয়োগ করা সার থেকে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিতে পারে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও উৎপাদন খরচ কমে।
ফিতাপাইপ : ফিতাপাইপ দিয়ে সাধারণত অগভীর নলকূপের পানি সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। ফিতাপাইপের সুবিধা হলো, সেচনালা না থাকলেও এটি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়। খরা প্রবণ এলাকায় ফিতাপাইপ ব্যবহার করে সেচ প্রদান করলে উৎস থেকে দূরবর্তী নির্দিষ্ট স্থানে অপচয় ছাড়াই সেচের পানি পৌঁছানো যায়।
পাকা সেচনালা : পাকা সেচনালা দিয়ে পানির অপচয় হয় না বললেই চলে। তবে পাকা সেচনালা স্থায়ী হলেও নির্মাণ ব্যয় বেশি এবং জমিও নষ্ট হয়। ইঁদুরের কারণে পুরনো পাকা সেচনালা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ভূনিম্নস্থ সেচ নালা : ভূনিম্নস্থ সেচ নালা পদ্ধতিতে পানি সেচ দিলে  ভূউপরিস্থ পানির বাষ্পায়ন কম হয় ও ফসলের শিকড়ের কাছাকাছি সেচের পানি পৌঁছানো সম্ভব হওয়ায় সেচের পানির সাশ্রয় হয়। এছাড়া মাটি ও পুষ্টি উপাদানের অপচয় হয়না, মূলের কাছাকাছি পুষ্টি উপাদান প্রয়োগ করা যায়, আগাছা কম জন্মায়, ফসলে রোগ কম হয়, ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিক ও সেচ খরচ কম লাগে। এ পদ্ধতির অসুবিধা হলো প্রাথমিকভাবে স্থাপন খরচ বেশি লাগে, কাদায় পাইপের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা পাইপ ছিদ্র হতে পারে। এ ছাড়া ইঁদুর গর্ত করে পাইপের পাশের বা উপর-নিচের মাটি সরিয়ে ক্ষতি করতে পারে। এসব সমস্যা মাটির নিচে হয় বিধায় সাথে সাথেই দেখা যায় না বা বুঝা যায় না। এজন্য কিছুদিন পরপর পাইপের মধ্যে পানি প্রবাহ দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়।  
ক্ষুদ্র সেচে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার : বর্তমানে বিভিন্ন পানীয় ও পানির ফেলে দেয়া বোতলগুলো ছোট আকারের সেচ কাজে ব্যবহার করা যায়। বোতলের ছিপিটিতে কয়েকটি ছিদ্র করে বোতলটি পানি ভর্তি করে সবজি বা ছোট আকারের ফল গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরে উপুড় করে মাটির ভেতরে পুঁতে দিয়ে সেচ প্রদান করা যায়। এতে শিকড় এলাকায় মাটির রস গাছের পুষ্টি উপাদান সংগ্রহের উপযোগী অবস্থায় আসে। ছাদ বাগানের পট/টব/হাফ ড্রাম বা ছোট আবারের সবজি ক্ষেতে বা ছোট আকারের ফল গাছে এভাবে সেচ দেয়ায় পানির সাশ্রয় করা যেতে পারে।
কলসি সেচ : মাটির কলসি দিয়ে সবজি ক্ষেতে সেচ প্রদান একটি প্রাচীন পদ্ধতি। সবজি ক্ষেতের দুই সারির মাঝে বা চারটি গাছের মধ্যবর্তী স্থানে একটি কলসির গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়। এর পর কলসিতে পানি ভর্তি করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রায় ৭০% পর্যন্ত পানি সাশ্রয় করা যেতে পারে। কলসির সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে ভেতরের পানি কলসির ব্যাসের প্রায় অর্ধেক বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মাটি পূর্ণ সিক্ত হয় ততক্ষণ তা গাছের শিকড়ের জন্য মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহে খুবই সহায়ক থাকে। ফসল ও বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে কলসিতে সপ্তাহে ২-৩ বার পানি ভরতে হতে পারে। শুষ্ক ও লবণাক্ত এলাকায় কলসি পদ্ধতিতে সেচ প্রদান খুবই কার্যকর হতে পারে।
বালুচরে মিনিপুকুর পদ্ধতি : দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে বিভিন্ন ফসলের চাষ হলেও অনেক চরই অনাবাদি পড়ে থাকে। এসব চরে মূলত বালুর কারণে  প্রচুর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। শুধু বালুচরে দানাজাতীয়, তেলজাতীয়, ডালজাতীয় ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন সম্ভব না হলেও পিট তৈরি করে কিছু কিছু সবজি চাষ সম্ভব। যেমন, মিষ্টিকুমড়া, লাউ ও স্কোয়াশ। চরের বালুতে একমিটার চওড়া ও গভীর করে গর্ত খুঁড়ে গর্তের ভেতরে ১০-১২ কেজি পরিমাণ শুকনো গোবর বা জৈব সার দিতে হয়। অন্যত্র তৈরি মিষ্টি কুমড়া বা লাউ চারা ঐ গর্তে লাগাতে হয়। তবে স্কোয়াশের বেলায় ৩০ সে.মি. চওড়া ও গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হয় এবং ৫-৬ কেজি শুকনো গোবর বা জৈবসার প্রয়োগ করতে হয়। পানি সেচের সুবিধার্থে চরে সারি করে ১০-১৫ মিটার পর পর ৩ বর্গমিটার আয়তনের ও এক মিটার গভীর বালু খুঁড়ে মোটা পলিথিন বিছিয়ে প্রথমে মিনিপুকুর তৈরি করতে হয়। এরপর শ্যালো বসিয়ে বা নিকটস্থ নদীর পানিপ্রবাহ থেকে ফিতাপাইপের সাহায্যে মিনি পুকুরে পানি ভরতে হয়। বালতি দিয়ে মিনিপুকুর থেকে পানি তুলে গর্তের চারায় বা গাছে সেচ দেয়া যায়।
সেচের জন্য পানি সংরক্ষণ
পুকুরও খাল-বিল সংস্কার করে দীর্ঘ সময় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার উপযোগী করে তোলা যায়, তাহলে শুকনো মৌসুমে এই পানি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে সেচ বাবদ খরচ কমবে।
মৌসুমে বোরো ধান, ভুট্টা, গম, শাকসবজি এবং ফল বাগানে প্রয়োজনীয় পানি সেচ প্রদান করা যেতে পারে।
শুষ্ক অঞ্চলে পাতকুয়া খনন করে সেটিতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনের সময় সেখান থেকে পাশের সবজি খেতে পানি সেচ দেয়া যায়।
পরিকল্পিত সেচ সময়সূচি নির্ধারণ  
সেচের কাজেও “স্মার্ট সেচ ব্যবস্থাপনা” প্রয়োগ করা যায়। ফসলে প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি পানি সেচ দিতে কৃষক আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে সঠিকভাবে অনুসরণ করবে, সে সাথে মাটির রসের অবস্থা বা জো অবস্থা বিবেচনা করে এবং গাছের বয়স ও বৃদ্ধির ধরণ অনুযায়ী বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পানির চাহিদা বুঝে সেচের পানির পরিমাণ নির্ধারণ করবে। ফল বাগানে রাতের বেলায় যদি সেচ দেয়া যায় তাহলে পানির বাষ্পায়ন কম হবে এবং এবং পানি মাটির নিচে চুইয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বেশি হবে। অর্থাৎ মাটির জো অবস্থা তৈরি সহজ হবে। এতে মাটিতে প্রয়োগ করা সার সহজে গাছের গ্রহণ উপযোগী অবস্থায় আসবে। মাটির নিচে চুইয়ে যাওয়া পানি ভূনিম্নস্থ পানির আধারকে সমৃদ্ধ করবে।
ফসল চাষাবাদের সময় সেচ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি
ফসল চাষে বিভিন্ন উপকরণ ব্যয়ের পাশাপাশি সেচের জন্য ব্যয় কত তা বের করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ফসল চাষাবাদের সময় সেচ সাশ্রয়ী প্রযুক্তিগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন। যেমন : খরা সহিষ্ণু ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আউশ ধান, ভুট্টা, গম, তিল ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে।
শুকনো চাষ : বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে জো অবস্থায় থাকা জমি কর্ষণের সময় একই সাথে বীজও বুনে দেয়া হয়। এতে শ্রমিক ব্যয় কমানোর পাশাপাশি জমি তৈরিতে পানি সেচের ব্যবহার এড়িয়ে পানির সাশ্রয় করা হচ্ছে। যেসব ফসলে পানি কম লাগে (যেমন- গম, তিল) সেসব ফসল চাষে এ পদ্ধতি কার্যকর।
বিনাচাষে ফসল উৎপাদন : বর্ষার পর যেসব এলাকায় জমির জো অবস্থা আসতে দেরি হয় অর্থাৎ জমিতে চাষ দেয়া সম্ভব হয় না, সেসব জমিতে বিনা চাষেই রসুন, আলু, ছিটিয়ে বোনা ধান সহজেই চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে, ফসলের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিকভাবে সেচের পানির খুব একটা প্রয়োজন হয় না। ফসল বেড়ে উঠলে যখন মাটির আর্দ্রতা বা মাটির রসের পরিমাণ কমতে থাকে তখন প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হয়।
নিবিড় ধান উৎপাদন পদ্ধতি বা এসআরআই এবং নিবিড় ফসল উৎপাদন পদ্ধতি বা এসসিআই : সবচেয়ে কম উপকরণ ব্যবহার করে ফসলের বৃদ্ধির কাম্য পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যেতে পারে নিবিড় ধান উৎপাদন পদ্ধতি (এসআরআই) ও নিবিড় ফসল উৎপাদন (এসসিআই) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে। এর ফলে ফসলের গাছ দৈর্ঘ্যে লম্বা, সতেজ ও দীর্ঘস্থায়ী মূল-প্রণালী বিশিষ্ট হয় এবং মাটিস্থ অণুজীবের বহুমুখী কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এসবের মধ্যে উপকারী অণুজীবগুলো গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও সতেজতায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এসআরআই ও এসসিআই পদ্ধতিতে ২৫-৪০% কম সেচ প্রদান করতে হয়। এতে মাটির পানিধারণ ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ফসল তাপমাত্রা ও খরা সহিষ্ণু হয়ে বেড়ে ওঠে। এসআরআই ও এসসিআই পদ্ধতিতে বজরা বা জোয়ার, লিগুমজাতীয় ফসল, ভুট্টা, সরিষা, আখ, তিল, হলুদ, গম, ধান ও সবজি চাষ করা যেতে পারে।  একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এ দুই পদ্ধতি উল্লিখিত বিভিন্ন ফসলে ব্যবহার করে গমে সর্বনিম্ন ১০% এবং তিলে সর্বোচ্চ ৪০০% পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
মালচিং-এ কালো পলিথিন ব্যবহার : শুষ্ক ও ঠা-া মৌসুমে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি ক্ষেতে মালচিং দ্রব্য হিসেবে কালো পলিথিন প্লাস্টিক ফিল্ম সবজি বেডের সারিতে একাধিক মৌসুম পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। মালচিং এ কালো পলিথিনের ব্যবহার ২৫% পর্যন্ত পানি সাশ্রয় করে থাকে। এক্ষেত্রে, বেড তৈরির পর সবজি চারা রোপণ বা বীজ বপন দূরত্ব অনুযায়ী ড্রিপ সেচের পাইপ স্থাপন করতে হয় বেডের ওপর। এরপর কালো পলিথিন প্লাস্টিক ফিল্ম বিছিয়ে বেডের দু’পাশে মাটি চাপা দিতে হয়। যে সব স্থানে চারা রোপণ বা বীজ বপন করা হয়, সে সব স্থানে ধারালো চাকু দিয়ে কালো প্লাস্টিক গোল করে কাটতে হয়। ড্রিপ সেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সার পানির সাথে মিশিয়ে সেচ দিলে বাষ্পায়নের মাধ্যমে পানি এবং ইউরিয়া কোনটারই অপচয় হয় না। এতে মাটির রস কাম্য মাত্রায় থাকার পাশাপাশি মাটির তাপমাত্রাও ঠিক থাকে এবং আগাছাও জন্মায় না। অন্যদিকে, গরমের মৌসুমে কালো পলিথিনের ওপর শুকনো খড় বা শুকনো ঘাস-খড়কুটা বা ফসলের শুকনো অবশিষ্টাংশ বিছিয়ে দিলে অতিরিক্ত তাপ থেকে ফসল রক্ষা পায়। এতে ড্রিপ সেটের মাধ্যমে পানি সেচও কম লাগে।
আচ্ছাদিত ফসল  : মাটিকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষার জন্য যে কোন ধরনের গাছ বা ফসল লাগাতে হয়, তা’না হলে উন্মুক্ত মাটি বিভিন্নভাবে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। এজন্য আচ্ছাদন ফসল চাষ করলে আগাছা কম জন্মানোর পাশাপাশি মাটির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। আচ্ছাদন ফসলের শিকড় মাটির ক্ষয়রোধ করে ও মাটিকে দৃঢ়তা প্রদান করে। এ অবস্থায় মাটিতে সেচ দিলে পানি সহজেই মাটিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, খরা প্রবণ অঞ্চলে জমিতে সেচ দিলে যে পানি লাগে আচ্ছাদিতভাবে ফসল চাষ করার পর সেচের পরিমাণ তার চেয়ে ১১-১৪ ভাগ পর্যন্ত কম লাগে। ফল বাগানে আচ্ছাদন ফসল চাষ করলে সহজেই সেচের পানির সাশ্রয় করা যায়।
সংরক্ষিত চাষ : ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচ- খরা ও বায়ূ দূষণের পর মাঠের বহুবর্ষজীবী ঘাস কমানোর জন্য গভীর চাষের একটি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন হয়। সংরক্ষিত চাষ একটি বিশেষ চাষ পদ্ধতি, যাতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং কম পক্ষে ৩০% শস্যের অবশিষ্টাংশ রেখে জমি চাষ করা হয়। আচ্ছাদন শস্যের চাষ করা হয়, যাতে মাটির পানি বাষ্পীকরণ, মাটি ক্ষয় ও মাটির দৃঢ়তা কমে এবং মাটির রস ধারণক্ষমতা বাড়ে। মাটিতে প্রচুর জৈবসার ও প্রয়োজনে মালচিং দ্রব্যও ব্যবহার করা হয়।
জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ : প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয়ে আসছে। কৃষি বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতির সাথে এদেশের কৃষিতেও যুক্ত হয়েছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বা কৃষি কলাকৌশল। এসবের মধ্যে যেমন আছে উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ তেমনি আছে কৃষি যন্ত্রপাতিও। আরো আছে কৃষি বাজার ব্যবস্থাপনা। তবে ফসল আবাদের সাথে প্রাথমিকভাবে জড়িত যে সব কৃষি উপকরণ বাংলাদেশের কৃষিকে প্রাচীন কৃষি থেকে আলাদা করেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বীজ, সার ও বালাইনাশক। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে যেসব সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলোর কিছু কিছু মাটির গুণাগুণের কিছুটা পরিবর্তনও ঘটায় যা মাটির পানি ধারণক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে শুধুমাত্র জৈবসার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ে, সে সাথে বাড়ে মাটির অনুজৈবিক কার‌্যাবলী। যুক্তরাষ্টে এক মাঠ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, মাঠ ফসল চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগে আধুনিক পদ্ধতিতে সেচের পানির ব্যবহারের চেয়ে জৈব পদ্ধতিতে  ২০ ভাগ কম পানি লাগে।
মাইকোরাইজা ব্যবহার : আধুনিক কৃষিতে মাইকোরাইজার ব্যবহার কৃষিতে পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি গাছের প্রয়োজনীয় ফসফরাসসহ অন্যান্য আরো কিছু পুষ্টি উপাদান মাটি থেকে গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাইকোরাইজাকে ইদানিং “শিকড় ছত্রাক” বলা হয়। মাইকোরাইজা মাটির নিচে গাছের শিকড়গুলোকে একটার সাথে আরেকটাকে যুক্ত করে, ফলে গাছের খাদ্য গ্রহণ এলাকা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এক ধরনের এনজাইম নিঃসরণ করার ফলে শিকড়ের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পায় ও মাটিস্থ পুষ্টি উপাদান গাছের গ্রহণীয় অবস্থায় আসে। মাইকোরাইজা মাটিতে থাকার কারণে ২৫% পর্যন্ত সেচের পানির সাশ্রয় হয় এবং গাছকে খরা সহিষ্ণু হয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। কখনো কখনো কম পানি ও সার থাকলেও ফুল ও ফল ধরতে সাহায্য করে থাকে। লিচু বাগানে মাইকোরাইজা ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। এজন্য লিচু বাগানের পুরোটা জুড়ে চাষ ও রাসায়নিক সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
এডব্লিউডি পদ্ধতি : ধান চাষের বেলায় প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বলা হয়ে তাকে যে, এক কেজি ধান উৎপাদনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। আসলে ধান গাছের সব পর্যায়েই পানির প্রয়োজন হয় না বা একই পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় না। কখনো কখনো ছিপছিপে পানি থাকলেও চলে। এসব দিক বিবেচনা করে কৃষি বিজ্ঞানীগণ অলটারনেট ওয়েটিং এন্ড ড্রাইং পদ্ধতির প্রচলন করেছেন। এতে  বোরো ধানে ৪-৫টি সেচ কম লাগে। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে        ৭-১০ সেমি. ব্যাস ও ২৫ সেমি. লম্বা ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ বা বাঁশের চোঙ বোরো ক্ষেতে চারটি গুছির মাঝে খাড়াভাবে স্থাপন করতে হয় যেন এর ছিদ্রহীন ১০ সেমি. মাটির উপরে এবং ছিদ্রযুক্ত ১৫ সেমি. মাটির নিচে থাকে এবং পাইপের ভেতরে কোন মাটি না থাকে। পাইপের ভেতরের পানির পরিমাণ দেখে সেচ প্রদান করা হয়ে থাকে ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত। গাছের থোড় অবস্থা আসার পর এটির ব্যবহার আর করা হয় না।    
নালায় সেচ প্রদান : উঁচু বেড পদ্ধতিতে চাষাবাদে দুই বেডের মধ্যবর্তী নালায় সেচ প্রদান করে সেচের পানির সাশ্রয় করা সম্ভব। বেডগুলো যদি ১৫ সেমি. উঁচু হয়, তাহলে মধ্যবর্তী নালায় পানি ধরে রাখলে দু’পাশে পানি শুষে নিয়ে গাছের মূল-প্রণালী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ভাসানো সেচের প্রয়োজন পড়ে না। আবার ভাসানো সেচ দিলে আগাছা বেশি জন্মায় ও সে জন্য নিড়ানি খরচের পাশাপাশি অতিরিক্ত পানিও খরচ হয়ে যায়।
জৈব জ্বালানি হিসেবে ফসল উৎপাদন বন্ধ করা
বর্তমানে জ্বালানির বিকল্প উৎস হিসেবে জৈব জ্বালানি ব্যবহারের চেষ্টা করছে অনেক দেশ। এজন্য তারা বিশেষ ধরনের ফসল আবাদের উপর জোর দিচ্ছে। এসব ফসল উৎপাদনে প্রচুর সেচের পানির প্রয়োজন, যা অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তাই শুধু জৈব জ্বালানি হিসেবে উৎপাদিত ফসল উৎপাদন বন্ধ করেও সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।  
পরিবেশে কৃষি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে যে বিপুল পরিমাণ পানির ব্যবহার হয়, তা যদি পুনঃব্যবহারযোগ্য করে কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, তাহলে বিপুল পরিমাণ পানির সাশ্রয় করা সম্ভব।

লেখক : উদ্যান বিশেষজ্ঞ, সংযুক্ত : সরেজমিন উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৮১৮৭১৯৪৫৩ ই-মেইল  : mesbahul65@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon